বাবুগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ দক্ষিনাঞ্চলের আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক সাদা মনের মানুষ হিসেবে পরিচিত নানা খেতাবপ্রাপ্ত কবিরাজ হোসেন মোল্লা আর নেই। বুধবার সকাল পৌঁনে ৭টায় বরিশালের উজিরপুরের জয়শ্রী এলাকায় নিজের প্রতিষ্ঠিত দাওয়াখানায় বার্ধক্যজনিত কারনে ইন্তেকাল করেন তিনি (ইন্না লিল্লাহে … রাজেউন)। তার বয়স হয়েছিলো ৯৭ বছর। মৃত্যুকালে তিনি ২ ছেলে ও ৪ মেয়ে এবং ৩ স্ত্রীসহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন। সকাল ১০টায় জয়শ্রীতে তার প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে উজিরপুর উপজেলার বামরাইল ইউনিয়নের দক্ষিণ কালিহাতা গ্রামে বাদ জোহর দ্বিতীয় নামাজে জানাজা শেষে তার মরদেহ পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়। হোসেন মোল্লার উক্তি ছিলো ‘মৃত্যুর পরেও যদি মানুষের উপকার করা যায়, কবর না দিয়ে মোরে পাঠিয়ে দিও চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়।’ হোসেন মোল্লার ছেলে আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার পর তার বাবা নিজের মরদেহ দেহ বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজে দান করেন। কিন্তু বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি মহামারী আকার ধারন করায় পরিবারের অনুরোধের প্রেক্ষিতে তার মরদেহ পারিবারিক কবরস্থানে দাফনের মৌখিক অনুমতি দিয়েছেন মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ। ১৯৫২ সালে সিলেট শহরে বরিশালের ৩ বন্ধুকে নিয়ে ভারতের কালকাতার বালিগঞ্জ কোম্পানীর আয়ুর্বেদিক মহাশংকর তৈল বিক্রয় শুরু করেন হোসেন মোল্লা। স্বাধীনতার পর বরিশাল শহরে এসে ওই তিন বন্ধু মিলে নিজেদের কোম্পানীর মাধ্যমে মহাশংকর তৈল ও দাঁতের মাজন তৈরী করে বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর, গলাচিপাসহ বিভিন্ন স্থানে বাজারজাত শুরু করেন। ১৯৮০ সালের দিকে কবিরাজ হোসেন মোল্লা বিভিন্ন দেশীয় গাছ গাছড়া ও ধাতু দিয়ে তার নিজ নামে কোম্পানী তৈরী করে বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার দোয়ারিকা ফেরিঘাটে কোম্পানীর কার্যক্রম শুরু করেন। এ সময় তিনি মহাশংকর তৈল, দাঁতের মাজন, ছাল বাকল, কোবরা বাম, নিমতা বাম, বোনাজী পিল, ফেরোজা মলম, ফেরোজা ফ্যাক্স, সুগন্ধী আগরবাতি গোলাপজল সহ বিভিন্ন পণ্য তৈরী করে বাজারজাত করেন এবং তিনি নিজেই অত্যন্ত সুমিষ্ট ভাষায় গাড়িতে গাড়িতে উঠে তার পণ্য বিক্রির ক্যানভাস করেন। তার উৎপাদিত পন্য বাজারজাত করতো দৃষ্টি প্রতিবন্ধি ও শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিরা। ভিক্ষারত অনেককে তিনি তার পন্য উৎপাদন এবং বাজারজাতকরন কাজে লাগিয়ে স্বাবলম্বি করেছেন। তার জীবনের বড় শখ ছিল কবিরাজ হোসেন মোল্লা ইউনানী এন্ড আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজ ও গবেষনাগার প্রতিষ্ঠা করা। এ লক্ষ্যে জয়শ্রী বাসস্টান্ডে ৫তলা বিশিষ্ট ভবন তৈরী করে নিজের দাওয়াখানায় চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছিলেন তিনি। তার চিকিৎসা জীবনে স্বর্ণ, রৌপ্য ব্রোঞ্জ, মাদার তেরেসা, স্বাধীনতা স্বর্ণপদকসহ অসংখ্য পদকে ভূষিত হয়েছেন তিনি। এমনকি বিবিসিতেও তাকে নিয়ে সংবাদ সম্প্রচারিত হয়েছে।
Leave a Reply